মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার নতুন নিয়মে F1 ভিসা শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ || Jahid Hasan

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসা অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী F1 ভিসা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে স্টুডেন্ট ভিসার নতুন নিয়ম আসায় অনেক শিক্ষার্থীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। নিচে সেই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হলো:

১. নির্দিষ্ট সময়সীমা (Fixed Duration of Stay)

  • আগে কী ছিল: পূর্বে শিক্ষার্থীরা Duration of Status (D/S) সুবিধা পেত। অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত তাদের পড়াশোনা চলত (পড়াশোনার মেয়াদ + অনুমোদিত ট্রেনিং), ততদিন তারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকতে পারত।

  • এখন কী হচ্ছে: নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

  • সমস্যা:

    • যদি কারও পিএইচডি বা দীর্ঘ গবেষণা প্রকল্প ৫–৬ বছর সময় নেয়, তাহলে মাঝপথে আবার ভিসা বা সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে হবে।

    • এতে বুরোক্র্যাটিক ঝামেলা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে।


২. OPT-র পর গ্রেস পিরিয়ড কমানো

  • আগে কী ছিল: OPT শেষ হলে শিক্ষার্থীরা ৬০ দিন সময় পেত নতুন ভিসা, কাজ বা দেশে ফেরার পরিকল্পনা করার জন্য।

  • এখন কী হচ্ছে: অনেক ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ৩০ দিনে কমানো হয়েছে

  • সমস্যা:

    • শিক্ষার্থীদের চাকরি খোঁজা, ভিসা পরিবর্তন বা দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় খুব কমে গেছে

    • এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী তাড়াহুড়ো করে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা ভিসা স্ট্যাটাস হারাতে পারে।


৩. ভিসা ইন্টারভিউ আরও কঠিন

  • আগে কী ছিল: যারা একবার ভিসা নিয়েছিল, অনেক সময় Dropbox Program-এর মাধ্যমে নতুন করে ইন্টারভিউ না দিয়েই ভিসা নবায়ন করতে পারত।

  • এখন কী হচ্ছে: এখন প্রায় সবার জন্য সরাসরি ইন্টারভিউ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

  • অতিরিক্ত কড়াকড়ি:

    • ইন্টারভিউতে শিক্ষার্থীর Facebook, Instagram, LinkedIn প্রোফাইল পর্যন্ত যাচাই করা হচ্ছে।

    • ছোটখাটো অসঙ্গতি থাকলেও ভিসা রিজেক্ট হতে পারে।


৪. ভিসা বাতিল ও অতিরিক্ত নজরদারি

  • এখন F-1 শিক্ষার্থীদের SEVIS রেকর্ড (Student and Exchange Visitor Information System) খুব কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে।

  • সামান্য ভুল (যেমন: কোর্স ড্রপ করা, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে দেরি করা, বা SEVIS ফি আপডেট না হওয়া) হলে ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে

  • এর ফলে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকে।


৫. OPT, H-1B এবং Cap-Gap জটিলতা

  • OPT থেকে H-1B ভিসায় যাওয়া: শিক্ষার্থীরা সাধারণত OPT চলাকালীন H-1B এর জন্য আবেদন করে। আগে Cap-Gap সুবিধায় আবেদন প্রক্রিয়া চলার সময় বৈধভাবে থাকা যেত।

  • এখন কী হচ্ছে:

    • Cap-Gap কিছুটা বাড়ানো হলেও, যদি আবেদন বাতিল হয় তবে শিক্ষার্থী দ্রুত স্ট্যাটাস হারাতে পারে।

    • এর মানে হলো চাকরি না পেলে সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফিরতে হতে পারে।


৬. আর্থিক চাপ ও কাগজপত্রের ঝামেলা

  • আগে মূলত টিউশন ফি + কিছু লিভিং খরচের প্রমাণ দিলেই চলত।

  • এখন শিক্ষার্থীদেরকে দেখাতে হচ্ছে:

    • পুরো টিউশন ফি,

    • পুরো থাকার খরচ (Accommodation, Food, Transport),

    • এবং বৈধ আর্থিক প্রমাণ (Bank Statement, Sponsor Letter ইত্যাদি)

  • ফলে অনেক শিক্ষার্থীর জন্য আর্থিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।


৭. ভ্রমণ ও পুনরায় প্রবেশের ঝুঁকি

  • অনেক শিক্ষার্থীকে এখন Single-entry visa দেওয়া হচ্ছে, যার মেয়াদ কয়েক মাস বা সর্বোচ্চ ১ বছর।

  • এর মানে, যদি জরুরি কারণে দেশে যেতে হয়:

    • ফেরার সময় আবার নতুন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

    • নতুন ভিসা রিজেক্ট হলে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়।

  • এতে শিক্ষার্থীরা পরিবার দেখতে বা দেশে ভ্রমণ করতে ভয় পায়।


👉 সংক্ষেপে বললে, এই নতুন নিয়মগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য সময়, ভিসা প্রক্রিয়া, চাকরি ও আর্থিক দিক থেকে চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে ভিসা-স্ট্যাটাস নিয়ে একটা নিরাপত্তা ছিল, এখন অনেক বেশি অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

Jahid Hasan
Graduate Student at Wright State University

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *